কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়া কাঁচাপাটকে শর্তযুক্ত রফতানি পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে পরিপত্র জারি করায় বিপাকে পড়েছেন খুলনা অঞ্চলের পাট রফতানিকারক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। ইতিমধ্যে রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরা কর্মহীন হওয়ার শঙ্কায়, আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয়বারের মতো খুলনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পাট রফতারিকারক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা। এর আগে গত বুধবারও সড়ক অবরোধ করে তারা।পাট রফতানিকারক ও শ্রমিকরা জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হঠাৎ করেই বিশেষ শর্ত আর মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে কাঁচাপাট রফতানির পরিপত্র জারি করে। এতে কার্যত রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়তেই খুলনার দৌলতপুরে শ্রমিকদের মধ্যে কাজ হারানোর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে,
শ্রমিকদের দাবি, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দৌলতপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই খাতের সঙ্গে জড়িত লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মসংস্থান হারাবে।
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন ও পাট অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১২টি দেশে কাঁচাপাট রফতানি হয়েছে। তবে ভারত আমদানি বন্ধ করায় বর্তমানে ১১টি দেশে রফতানি হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু দক্ষিণাঞ্চল থেকেই ১১ মাসে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৯ বেল কাঁচাপাট রফতানি হয়েছে, যার মূল্য এক হাজার ৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অপরদিকে বেলজিয়াম, কিউবা, মিশর, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেনসহ অন্তত ১৭ দেশে কাঁচাপাট রফতানি বন্ধ রয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২১ লাখ ১২ হাজার ৪০০ বেল কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছিল, যা থেকে আয় হয়েছিল এক হাজার ৯০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে সাত লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৯ বেল, আয় হয়েছে এক হাজার ৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
দৌলতপুর জুট প্রেস অ্যান্ড বেলিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল খালেক হাওলাদার অভিযোগ করেন, ‘বাণিজ্য উপদেষ্টা ও তার পরিবার দেশে পাটপণ্য উৎপাদন ও রফতানির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাই তাদের অনৈতিক সুবিধা দিতেই এই পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এতে কৃষকরা পাটের ন্যায্য দাম পাবে না, শ্রমিকরা কাজ হারাবে।’
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য গাজী শরীফুল ইসলাম ওহিদ বলেন, ‘পরিপত্র জারির পর থেকে পাট রফতানি বন্ধ রয়েছে। কাস্টমস ক্লিয়ারিং বন্ধ হয়ে গেছে, বন্দরে আটকা পড়েছে পণ্য। কোথায় অনুমতি মিলবে বা শর্ত কী—কোনো কিছুই স্পষ্ট নয়।’
বার্তা সম্পাদক